Admission
জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র - মানবদেহের তৃতীয় প্রতিরক্ষা স্তর

মানবদেহকে রোগাক্রান্ত করতে সর্বশেষ যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় জীবাণুকে পরাস্ত করতে হয় সেটি হচ্ছে তৃতীয় প্রতিরক্ষা স্তর। এ স্তরটি দুধরনের, যেমন- সহজাত প্রতিরক্ষা (Innate or Inborn Immunity) এবং অর্জিত প্রতিরক্ষা (Acquired Immunity)।

ক.সহজাত প্রতিরক্ষা (Innate Immunity):
মানবদেহে যে প্রতিরক্ষা বা অনাক্রম্যতা অমরার মাধ্যমে প্রাপ্ত ও জন্মের সময় থেকে আজীবন উপস্থিত থাকে এবং প্রতিরক্ষায় দ্রুত কার্যকর হয় তাকে সহজাত প্রতিরক্ষা বলে।

এটি নিচে বর্ণিত ধরনের হতে পারে, যেমনঃ

১. প্রজাতিগত প্রতিরক্ষা (Species immunity): অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরজীবীর আক্রমণ বিশেষ প্রজাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। যেমন, ম্যালেরিয়ার পরজীবী (Plasmodium vivax) মানুষ ও মশকীর উপর পরজীবী।

২. গোষ্ঠীগত প্রতিরক্ষা (Racial immunity): কোন বিশেষ পরজীবী দ্বারা মানুষের কোন কোন গোষ্ঠী আক্রান্ত হয়। অপর গোষ্ঠীভুক্ত মানুষ পরজীবীটির আক্রমণ সহজেই প্রতিরোধ করে। যেমন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ শ্বেতাঙ্গ মানুষের চেয়ে বেশি যক্ষ্মার শিকার হতে দেখা যায়।

৩. ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা (Individual immunity): কোন কোন মানুষ নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য পরজীবীর সংক্রমণ প্রতিহত করতে পারে।

সহজাত প্রতিরক্ষা নিম্নোক্তভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে
১. প্রতিবন্ধক (Barriers): প্রতিবন্ধক টিস্যুগুলো হচ্ছে ত্বক, পৌষ্টিকনালি, শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ এবং নারীদের ক্ষেত্রে জনননালির প্রাচীর প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে।

২. প্রদাহ (Inflammation): টিস্যুর কোনো ক্ষতি হলে মাস্টকোষের তৎপরতায় নানা ধরনের কণিকা বিশেষ করে নিউট্রোফিল ও ম্যাক্রোফেজ জড়ো হয়ে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করে ফলে যন্ত্রণাদায়ক অবস্থার অবসান ঘটে।

৩. কমপ্লিমেন্ট (Complement): অন্ততঃ ২০ ধরনের প্লাজমা প্রোটিনে গঠিত এমন একটি  আন্তঃসম্পর্কিত গ্রুপ যা নিষ্ক্রিয়ভাবে রক্তে সংবহিত হয়ে বিভিন্ন প্রতিরক্ষা পদ্ধতিকে সাহায্য করে তাকে কমপ্লিমেন্ট বলে। সক্রিয় হলে অণুজীবের কোষঝিল্লিতে আটকে থেকে নিউট্রোফিল ও ম্যাক্রোফেজকে কোষভক্ষণে সহযোগিতা করে, কিংবা কোষধ্বংসে অংশ গ্রহণ করে।

৪. ইন্টারফেরন (Interferon): ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এবং কোষের অভ্যন্তরে ভাইরাসের বংশবৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটাতে আক্রান্ত কোষ থেকে ইন্টারফেরন নামক বিশেষ ধরনের গ্লাইকোপ্রোটিন উৎপন্ন ও ক্ষরিত হয়ে দেহকোষকে রক্ষা করে।

৫. সহজাত মারণকোষ (Natural killer cells): এগুলো লিম্ফোসাইট জাতীয় বিশেষ শ্বেত রক্তকণিকা যা টিউমার কোষ ও ভাইরাসে আক্রান্ত কোষকে ধ্বংস করে।

৬. সহজীবী ব্যাকটেরিয়া (Symbiotic bacteria): পরিপাকতন্ত্র, ত্বক ও নারীদের জননতন্ত্রে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া স্থায়ীভাবে বাস করে। এগুলো ক্ষতিকর নয়, বরং উপকারী ব্যাকটেরিয়া (যেমন কোলনে বাসকারী ব্যাকটেরিয়া ভিটামিন B ও K সংশ্লেষ করে)। কিছু অণুজীব রাসায়নিক পদার্থ ক্ষরণ করে অনুপ্রবিষ্ট জীবাণুর বৃদ্ধি রহিত করে দেয়।

Content added By